সতর্ক দৃষ্টি ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাদামি রঙের মা নীলগাই দুটি। তাদের মাঝখানে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে দুটি শাবক। শব্দ হলে মা নীলগাই দৌড়ে পালাচ্ছে। একই গতিতে দৌড়াচ্ছে শাবক দুটি। এই দৃশ্য গাজীপুরের শ্রীপুরের গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেতরের।
সাফারি পার্কে সম্প্রতি দুটি নীলগাই বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। একটির জন্ম গত ১০ অক্টোবর; আরেকটি ১৫ নভেম্বরে। দুটি শাবকের বয়সের পার্থক্য এক মাসের বেশি। গত চার থেকে পাঁচ দিন শাবক দুটি নীলগাইয়ের পালের কাছাকাছি এসেছে। এর আগে শাবক দুটিকে বনের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিল মা নীলগাই। তবে পার্কের লোকজন শাবকের জন্ম নেওয়ার পর এগুলোকে কয়েক দফা দেখেছেন।
পার্কের নীলগাইয়ের পালের ছবি তুলতে কোর সাফারির একটি অংশে বনের ঝোপের আড়ালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন এ প্রতিবেদক। একপর্যায়ে বনের ভেতর থেকে দুটি মা নীলগাই বাইরে কিছুটা উঁচু জায়গার দিকে আসতে থাকে। তাদের অনুসরণ করতে করতে বের হয়ে আসে শাকব দুটিও। সেখানে শাবক দুটি গিয়ে দুধ পান করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর একটি শাবক ঘাসে শুয়ে পড়ে। অপরটি পাশেই মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে সবুজ মাঠ ও ফাঁকা জঙ্গলে তারা ঘুরে বেড়ায়। একপর্যায়ে ঝোপের আড়ালে মানুষের অবস্থান বুঝতে পেরে নীলগাই ও এর শাবক দৌড়ে ঘন জঙ্গলের ভেতরে যায়।
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাফারি পার্কে এ পর্যন্ত সাতটি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে নীলগাই। পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় নিয়মিত বাচ্চা পাচ্ছি। বাচ্চার জন্ম হওয়ায় আমরা এদের ওপর অতিরিক্ত নজর রাখছি।’
দেখতে গাইয়ের মতো না হলেও এগুলোর নাম নীলগাই। এই প্রাণী বাংলাদেশের প্রকৃতিতে একসময় ছিল। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে গত ১৯৪০ সালের পর থেকে এ দেশের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীটিকে আর দেখা যায়নি। তাই নীলগাইকে এ দেশে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে ভারত সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশ অংশে বেশ কিছু নীলগাই স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে। এর পর সেগুলোকে দেশের অভ্যন্তরে গাজীপুর সাফারি পার্কে এনে রাখা হয়।
গাজীপুর সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, এন্টিলোপ প্রজাতির মধ্যে নীলগাই হলো সবচেয়ে বড় প্রাণী। পুরুষ নীলগাইয়ের শিং থাকে। এদের গায়ের রং হয় কিছুটা কালচে। একই প্রজাতির স্ত্রীদের ক্ষেত্রে শিং থাকে না। স্ত্রী প্রজাতির নীলগাইয়ের রং হয় কিছুটা বাদামি। নারী নীলগাই প্রাপ্তবয়স্ক হয় দুই বছরে। আর পুরুষ প্রজাতি প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় নেয় পাঁচ বছর। এরা একসঙ্গে একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পর থেকে এদের নিরাপত্তা ও দেখভালের পুরো দায়িত্ব পালন করে মা নীলগাই।
সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, নীলগাই সাধারণত বাচ্চার বিষয়ে ব্যাপক সতর্ক থাকে। তারা বাচ্চার নিরাপত্তার ঘাটতি দেখলে না খেয়ে নিরাপত্তা দিতে থাকে। এ জন্য এদের বাচ্চা হরহামেশায় দেখার সুযোগ কম। পার্কে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শাবকগুলো একটু পরিণত হওয়ায় মায়েরা তাদের নিয়ে বাইরে আসা শুরু করেছে। নতুন দুটিসহ এখন কোর সাফারিতে নীলগাইয়ের পালে সদস্যসংখ্যা ১১। এর মধ্যে ৯টি প্রাপ্তবয়স্ক। নতুন জন্ম নেওয়া শাবক দুটির লিঙ্গ এখনো নির্ধারিত হয়নি। আগের প্রাপ্তবয়স্ক ৯টির মধ্যে ৬টি পুরুষ ও ৩টি স্ত্রী।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআই্এন